জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধির দেশ বাংলাদেশ। ছোট-বড় বন-জঙ্গল ও হাওর-বিলসহ নানা প্রান্ত জুড়ে ছড়িয়ে আছে প্রাণ-প্রকৃতি। এ প্রাকৃতিক সমৃদ্ধির বিষয়টি জানান দিতেই বাংলাদেশ পেলো নতুন ধরনের একটি প্রজাপতি। এর আগে এটি দেশের প্রজাপতির তালিকায় রেকর্ড করা হয়নি। এর ইংরেজি নাম ‘কমন থ্রি রিং’ (Common Three Ring) বা ‘আফ্রিকান রিংলেট’ (African Ringlet) এবং বৈজ্ঞানিক নাম ‘ইপথিমা অ্যাস্টেরোপ’ (Ypthima asterope)। এর বাংলা নাম এখনো দেওয়া হয়নি।

চলতি মাসের ১ অক্টোবর রাজশাহী অঞ্চলে একদল প্রজাপতিপ্রেমী সদস্যরা এটি খুঁজে পান।

এ বিষয়ে শনিবার (৩ অক্টোবর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরুল কায়েস বলেন, ‘১ অক্টোবর আমরা রাজশাহীর পদ্মারপাড় থেকে খুঁজে পেলাম নতুন প্রজাতির একটি প্রজাপতি। যার বৈজ্ঞানিক নাম ইপথিমা অ্যাস্টেরোপ। এর আগে দেশে এটিকে দেখা যায়নি। এবারও ছবি তুলে সায়েন্টিফিকভাবে প্রামণিত করা হলো, এ প্রজাপতির অস্তিত্ব বাংলাদেশে রয়েছে। আমাদের গ্রুপের সেদিনের সদস্য ছিলেন আকাশ মজুমদার, ড. মাহমুদুল হক ওলি, দুর্লভ এবং তুষার ইসলাম। ’

তিনি বলেন, ‘প্রজাপতিদের ক্ষেত্রে বাংলা নামকরণ অনেক প্রজাপতিরই নেই। তার কারণ হচ্ছে- যে প্রজাপতিগুলো লোকালয়ে সচরাচর দেখা যায়, সেগুলোর বাংলা নাম রয়েছে। কিন্তু যেগুলো একটু বনজঙ্গলে দেখা যায় তাদের বাংলা নাম নেই। ’

‘নামকরণ’ এর ব্যাখ্যা দিয়ে ইমরুল বলেন, ‘ইংরেজি নামে এ প্রজাপতিকে প্রাথমিকভাবে হয়তো শনাক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু এতে সমস্যাও আছে। যেমন- এর ইংরেজি নাম কমন থ্রি রিং এর অন্তর্ভুক্ত আরও কয়েকটি প্রজাপতি আছে। বাংলাদেশে কমন থ্রি রিং এক রকম, আবার আফ্রিকায় কিংবা ইউরোপে অন্যরকম। এ রকম পাঁচটা অঞ্চল ভেদে এদের মধ্যে কিছু বৈচিত্র্য রয়েছে। এজন্য প্রজাপতিসহ সব ধরনের জীববৈচিত্র্যকে সুস্পষ্টভাবে শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সব সময়ই বৈজ্ঞানিক নাম ব্যবহারই শতভাগ নির্ভুল নামকরণ।

বাংলা নাম যেহেতু নেই, সে হিসেবে এ প্রজাপতির নাম হবে ইপথিমা অ্যাস্টেরোপ। আর বাংলা নামকরণের ক্ষেত্রে যারা এনথ্রোপলজিস্ট আছেন তারা এটি করতে পারবেন। ’

এ প্রজাপতির ‘মাতৃউদ্ভিদ’ সম্পর্কে ইমরুল আরও জানান, ‘গাছপালা ও পরিবেশ ব্যবস্থা যদি ভালো থাকে তবে প্রজাপতিও থাকবে। এ প্রজাপতির পোষক গাছ হলো প্রধানত ঘাস অথবা ছোট ঝোপ জাতীয় গাছগুলো। লার্ভা গুলো (প্রজাপতির পূর্বরূপ) বালুময় জায়গার কচি সবুজ ঘাস খেয়ে এরা বড় হয়। ’

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) বাংলাদেশের ২০১৫ সালের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশে রেকর্ডকৃত প্রজাপতির সংখ্যা ৩০৫টি।

তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, দেশের বন-জঙ্গলসহ সমস্ত সমতল ভূমিতে প্রায় ৪০০ প্রজাতির প্রজাপতির অস্তিত্ব থাকার কথা বলেও জানান বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী মো. ইমরুল কায়েস।

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.