ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এক এলাকার পানি কমতে শুরু করছে তো নতুন করে আরেক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ১৯টি নদ-নদীর পানি। এতে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে।

বন্যাদুর্গত এলাকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের অনেক গ্রামের ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণ সহায়তাও পাচ্ছেন না অনেকেই।

স্থায়ী বন্যার কারণে ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি ও অন্যান্য গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। বিভিন্ন বিষধর সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের মধ্যে। নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। চাঁদপুরে পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে নবনির্মিত তিনতলা বিশিষ্ট রাজরাজেশ্বর ওমর আলী হাইস্কুল ও সাইক্লোন শেল্টার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) বলছে, বন্যার কারণে এ মুহূর্তে দেশের ৩২টি জেলা উপদ্রুত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে- সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, লালমনিরহাট, নীলফামারী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ি, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী।

এগুলোর মধ্যে শুধু প্রথম ৪ জেলায় পরিস্থিতি উন্নতির দিকে আছে। পরের ৮ টিতে পরিস্থিতি বেশি অবনতিশীল। দু’দিন ধরে কুষ্টিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া শুরু করেছে। এছাড়া, পাবনা ও কক্সবাজার বন্যা কবলিত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

এদিকে দিন দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনার শাখা নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টা পদ্মার পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত থাকতে পারে। এতে মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

অপরদিকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

বর্তমানে ১৯টি নদীর পানি ৩০টি স্টেশনে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.