৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হলো আজ বৃহস্পতিবার। এর মাধ্যমে সেতুর কাঠামো পূর্ণতা পেল। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু কয়েকটি রেকর্ড করে ফেলেছে।

প্রকল্প সূত্র বলছে, বিশ্ব রেকর্ডের সংখ্যা তিনটি। প্রথমটি সেতুর পাইলিং নিয়ে। পদ্মা সেতুর খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়েছে। এসব পাইল তিন মিটার ব্যাসার্ধের। বিশ্বে এখনো পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে পাইলিং প্রয়োজন হয়নি এবং মোটা পাইল বসানো হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

দ্বিতীয় রেকর্ড হলো, ভূমিকম্পের বিয়ারিং–সংক্রান্ত। এই সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের’ সক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে।

তৃতীয় রেকর্ড নদীশাসন–সংক্রান্ত। নদীশাসনে চীনের ঠিকাদার সিনোহাইড্রো করপোরেশনের সঙ্গে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এর আগে নদীশাসনে এককভাবে এত বড় দরপত্র আর হয়নি।

এ ছাড়া পদ্মা সেতুতে পাইলিং ও খুঁটির কিছু অংশে অতি মিহি (মাইক্রোফাইন) সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এসব সিমেন্ট অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছে। এ ধরনের অতি মিহি সিমেন্ট সাধারণত ব্যবহার করা হয় না বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা।
চলতে পারবে ৫ তলার সমান উচ্চতার নৌযান

পদ্মা সেতুর নদীতে থাকা ৪০টি পিলারের নিচের পাইল ইস্পাতের। আর ডাঙার দুটি পিলারের পাইল কংক্রিটের। নদীতে যেসব পাইল বসানো হয়েছে, সেগুলো তিন মিটার ব্যাসার্ধের ইস্পাতের বড় বড় পাইপ, যার ভেতরটা ফাঁপা। ২২টি পিলারের নিচে ইস্পাতের এমন ৬টি করে পাইল বসানো হয়েছে। বাকি ২২টিতে বসানো হয়েছে ৭টি করে পাইল। আর ডাঙার দুটি পিলারের নিচের পাইল আছে ৩২টি, যা গর্তের মধ্যে রড-কংক্রিটের ঢালাইয়ের মাধ্যমে হয়েছে।

নদীর পানি থেকে প্রায় ১৮ মিটার উঁচু পদ্মা সেতুর তলা। পানির উচ্চতা যতই বাড়ুক না কেন, এর নিচ দিয়ে পাঁচতলার সমান উচ্চতার যেকোনো নৌযান সহজেই চলাচল করতে পারবে।

উচ্চতা সমান কেন?

পদ্মা সেতুটির মূল কাঠামোর উচ্চতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সমান। এর মূল কারণ, সেতুর ভেতর দিয়ে রেললাইন আছে। সড়ক ও রেললাইন একসঙ্গে থাকলে সেতু সাধারণত সমান হয়। না হলে ট্রেন চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পদ্মা নদীর পানির প্রবাহ পরিবর্তন হয়। কখনো মাওয়া প্রান্তে, কখনো জাজিরা প্রান্তে সরে যায়। আবার মাঝখান দিয়েও স্রোত প্রবাহিত হয়। এ জন্য নৌযান চলাচলের পথ সব স্থানেই সমান উচ্চতায় রাখার চেষ্টা রয়েছে সেতুটিতে।

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.