করোনাভাইরাসের নতুন কিছু তথ্য
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ: বর্তমান সময়ে সারাবিশ্ব ভয়ঙ্কর এক মহামারী দেখা দিয়েছে। কোভিট-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাসের জেরে গোটা দেশ গৃহবন্দী। সারা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১,২৫,০৭,৮৪৯ জনের বেশী। মৃত্যুর ৫ লাখ ৬০ হাজার ৪৬০ জনেরও বেশি। এবার কিছু আজানা তথ্য জানুন, করোনা ভাইরাস বাচ্চাদেরও শরীরে ভালো প্রভাব ফেলে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুব সামান্য লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে খুব সমস্যার পরতে হয়। করোনা ভাইরাসে সব থেকে বেশি ভয় বৃদ্ধদের। কারন মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে, ফলে এই ভাইরাস জেঁকে বসে। তবে কোনো ব্যাক্তির শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ ভালো হয় তাহলে সে নিজে থেকেই সুস্থ্য হয়ে উঠবে। তাই সবসময় সচেতন থাকুন ও বাড়ির বাচ্চাদের খেয়াল রাখুন এবং যত্ন নিন।
করোনা একটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ ‘মুকুট’। অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তোলা ছবিতে এই ভাইরাসটি দেখতে মুকুটের মতো বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে করোনা। প্রকৃত অর্থে ১৯৬০ সালের দিকে মুরগীর সংক্রামক রোগের ভাইরাস হিসেবে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল। তবে এরপর মানবদেহে হওয়া সাধারণ সর্দি কাশিতেও করোনাভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। মানবদেহে পাওয়া সাতটি করোনাভাইরাস হচ্ছে, হিউম্যান করোনাভাইরাস ২২৯ই এবং হিউম্যান করোনাভাইরাস ওসি৪৩, এনএল ৬৩, এইচকিউ ওয়ান, সার্স, মার্স, এবং নভেল, করোনাভাইরাস, করোনাভাইরাসগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি মারাত্মক না হলেও পরের চারটি মানুষের জন্য গুরুতর পরিণতি বয়ে আনতে পারে। করোনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে তাণ্ডব। প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এই করোনা নিয়ে মানুষের জানার শেষ নেই। তবুও এমন অনেক তথ্য আছে যা এখ অজানা।
সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে বিপুল আতঙ্ক তৈরি করেছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। আর জীবনকে সফল করতে চাই নানামুখী পদক্ষেপ। মানুষের জীবনে স্বপ্নের হাত ধরেই সফলতার জাগরণ সৃষ্টি হয় আর সৎ কর্মের মাধ্যমে মানুষ সফলতার দেখা পায় বা সার্থক হয় জীবন। জীবনের এ সফলতার পিছনে ছুটতে আপনার প্রথম শক্তি হচ্ছে স্বাস্থ্য। প্রবাদে আছে ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।’নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন: ‘চায়না ভাইরাস’, ‘করোনাভাইরাস’, ‘২০১৯ এনকভ’, ‘নতুন ভাইরাস’, ‘রহস্য ভাইরাস’ ইত্যাদি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের আরোগ্য দিতে সহায়তা করতে পারে তার জন্য এ বিষয়ে জানা একান্ত অপরিহার্য। ব্যাপক অর্থে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের নিয়মনীতি অনুসারে করোনাভাইরাসসহ কোনো ভাইরাসেরই প্রতিষেধক হিসেবে একক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নেন। তবে কোনো একটি এলাকায় বসবাসরত অধিকাংশ লোক যদি সবাই একই লক্ষণ সমষ্টি নিয়ে করোনাভাইরাসসহ অন্য যে কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য যে একক ওষুধটি নির্বাচিত হবে। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনা মোকাবেলায় উপযুক্ত ওষুধ তাদের হাতে রয়েছে। ভ্যাকসিন বা অ্যালোপ্যাথি ওষুধ নয়, হোমিওপ্যাথিতেই করোনা প্রতিরোধ করা যাবে।
ভারতের আয়ুর্বেদিক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা যায়। করোনা আক্রান্তের উপসর্গ সারানোর জন্য ইউনানি ওষুধ অত্যন্ত কার্যকর বলে জানানো হয়েছে। এ জন্য একটি নির্দেশিকাও জারি করা হয়। কী করা উচিত, কী করা উচিত নয় তার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। এমন কী ওষুধ খেতে হবে, তা-ও বলা হয়েছে। করোনা ভাইরাস একটি সংক্রামক ভাইরাস। এটির সংক্রমনে জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। অবস্থা মারাত্মক হলে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে, এমনকি শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে রোগী মারা যেতে পারে।
তবে ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এর আক্রমন তেমন হয় না। বয়স্ক রোগী যারা ইতিমধ্যে ডায়াবেটিস, হাঁপানী, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারী ডিজিজ, ইমফাইসেমা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত তাদের মধ্যে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। যেসব লোক মারা গেছে তারা এসব রোগে আক্রান্ত ছিল। সাধারণ লক্ষণঃ-জ্বর, কাশি,শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ। পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। মানুষের মধ্যে যখন ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেবে তখন বেশি মানুষকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে তাদের। তবে এমন ধারণাও করা হচ্ছে যে নিজেরা অসুস্থ না থাকার সময়ও সুস্থ মানুষের দেহে ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে মানুষ। শুরুর দিকের উপসর্গ সাধারণ সর্দিজ্বর এবং ফ্লু’য়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া স্বাভাবিক। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেককে সার্স ভাইরাসের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে যা ২০০০ সালের শুরুতে প্রধানত এশিয়ার অনেক দেশে ৭৭৪ জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিলো নতুন ভাইরাসটির জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটি অনেকটাই সার্স ভাইরাসের মতো। “আমরা যখন নতুন কোনো করোনাভাইরাস দেখি, তখন আমরা জানতে চাই এর লক্ষ্মণগুলো কতটা মারাত্মক। এ ভাইরাসটি অনেকটা ফ্লুর মতো কিন্তু সার্স ভাইরাসের চেয়ে মারাত্মক নয়,” বলছিলেন এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মার্ক উলহাউস।
জটিল লক্ষণ প্রকাশ: জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এরপরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। এখন পর্যন্ত এই রোগে মারা যাওয়ার হার কম (১% থেকে ২% এর মধ্যে) – তবে এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ইউরোপের কোন কোন অঞ্চলে এখন অধিক মৃত্যুহারও দেখা যাচ্ছে। ৫৬ হাজার আক্রান্ত রোগীর উপর চালানো এক জরিপ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। এই রোগে ৬% কঠিনভাবে অসুস্থ হয়। তাদের ফুসফুস বিকল হওয়া, সেপটিক শক, অঙ্গ বৈকল্য এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হয়। ১৪% এর মধ্যে তীব্রভাবে উপসর্গ দেখা যায়। তাদের মূলত শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি হয়। ৮০% এর মধ্যে হালকা উপসর্গ দেখা যায়। জ্বর এবং কাশি ছাড়াও কারো কারো নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা যেতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের কোনো ধরণের অসুস্থতা রয়েছে (অ্যাজমা, ডায়বেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ) তাদের মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চীন থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করে জানা যায় যে, এই রোগে নারীদের চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা সামান্য বেশি। আক্রান্ত ব্যক্তি যেন শ্বাস প্রশ্বাসে সহায়তা পায় এবং তার দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেন ভাইরাসের মোকাবেলা করতে পারে তা নিশ্চিত করা থাকে চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য।
পরামর্শ: মাঝে মাঝে সাবান-পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া। হাত না ধুয়ে মুখ, চোখ ও নাক স্পর্শ না করা। হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা। ঠাণ্ডা বা ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে না মেশা। মাংস ও ডিম খুব ভালোভাবে রান্না করা। বন্য জীবজন্তু কিংবা গৃহপালিত পশুকে খালি হাতে স্পর্শ না করা। ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় যেকোনো খবরের জন্য একটি দারুণ প্রতীকী ছবি হচ্ছে মাস্ক বা মুখোশ পরা কোন মানুষের মুখচ্ছবি। বিশ্বে বহু দেশেই সংক্রমণ ঠেকানোর একটি জনপ্রিয় ব্যবস্থা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার। বিশেষ করে চীনে, যেখান থেকে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা, সেখানেও মানুষ বায়ুর দূষণের হাত থেকে বাঁচতে হরহামেশা নাক আর মুখ ঢাকা মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়। করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন, অবশ্য বায়ুবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্ক কতটা কার্যকর সে ব্যাপারে যথেষ্টই সংশয়ে আছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা, যাদেরকে বলা হয় ভাইরোলজিস্ট।
হোমিও পরামর্শ: আমরা জানি, করোনা ভাইরাস একটি ভাইরাস-ঘটিত সংক্রমণ। কাজেই প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থা এর আরোগ্যকারী চিকিৎসা প্রদানে অক্ষম। তারা ম্যানেজমেন্ট, স্বাস্থ্যবিধি, কোয়ারেনটাইন ইত্যাদি উপায়গুলোর পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাপারটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করবে। তাদের সে সক্ষমতাও আছে এবং হয়তো সে আন্তরিকতাও আছে। কিন্তু তাদের আরোগ্যকারী চিকিৎসা দিতে না পারার জন্য নিজেদের মধ্যে থাকা অন্তর্নিহিত দুর্বলতা থাকাটা অবধারিত। আর সাধারণ মানুষের প্যানিক হওয়াটা যে স্বাভাবিক সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর হোমিওপ্যাথি হলো রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। এই জন্য এক জন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক রোগীর রোগের পুরা লক্ষন নির্বাচন করতে পারলে করোনা ভাইরাস হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এর আগে যেই ভাবে হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগেরও নিয়ন্ত্রণ যেভাবে সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে করোনা ভাইরাস সেই ভাবে নিয়ন্ত্রণও হোমিওপ্যাথিতে সম্ভব হচ্ছে, বিশেষ করে সেন্টাল পুলিশ হাসপাতাল ও রামকৃষ্ণ মন্দিরে করোনা আক্রান্ত অনেক রোগী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে আরোগ্য হয়েছে। এক যোগে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সারা বাংদেশে ৬৪ টা হোমিও কলেজ, এবং সকল রেজিস্টার্ড পাপ্ত চিকিৎসক গন করোনা রোগীর রোগের লক্ষণের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অনুরূপ লক্ষণে হোমওপ্যাথি ঔষধ, একোনাইট ন্যাপ,ইনফ্লুয়েঞ্জিনাম, আর্সনিক এ্যালবাম, বেলাডোনা, ব্রাইয়োনিয়া, জেলসিমিয়াম, ড্রসেরা, কার্বোভেজ, সহ আরো অনেক ঔষধ রোগীর রোগের লক্ষণের উপর আসতে পারে। তাই ঔষধ নিজে নিজে ব্যবহার না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্পাদক, সবুজ আন্দোলন কার্যনির্বাহী পরিষদ
কো-চেয়ারম্যান হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ইমেইলঃdrmazed96@gmail.com