নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা গ্রহণে ভোগান্তি কমেনি। বরং সেবা গ্রহণের শ্রেণিবিন্যাস করার ফলে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি বেড়েছে। সাধারণ নাগরিকদের দোরগড়ায় সেবা পৌঁছানো এবং ভোগান্তি কমাতে এনআইডি কার্যক্রমের বিকেন্দ্রীকরণ করা হলেও এর সুফল মিলছে না। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, স্বল্প জনবল দিয়ে ১১ কোটি নাগরিকের সেবা প্রদান করতে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, আগের চেয়ে এখন সহজে ও স্বল্প সময়ে নাগরিকদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ঘরে বসে অনলাইনে এনআইডি কার্যক্রম করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে নাগরিকদের সেবার মান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এনআইডি উইংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের চেয়ে এনআইডি সেবা কার্যক্রমে ভোগান্তি অনেকটা কমেছে। এনআইডি সেবার শ্রেণিবিন্যাসের কারণে কিছুটা ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। তবে সরকারি যতগুলো নাগরিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আছে, তার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি কার্যক্রম অনেকটা স্বচ্ছ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা আছে। বর্তমানে ঢাকার নির্বাচন কমিশনের অফিস থেকে এনআইডি-সংক্রান্ত কোনো আবেদন গ্রহণ করা হয় না। অনলাইনে সব ধরনের আবেদন নেওয়া হয়। সরাসরি আবেদন গ্রহণ না করার ফলে দুর্নীতিও অনেকটা কমেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন থেকে ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ছবিসহ ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন-সংক্রান্ত একটি গেজেট জারি হয়। সেখানে বলা আছে, এনআইডি সংশোধন-সংক্রান্ত যাবতীয় আবেদন উপজেলা কার্যালয় গ্রহণ করবে। সেখানেই সংশোধন-সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি, যাচাই-বাছাই ও তদন্তপূর্বক আবেদনের ধরন অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস (ক, খ, গ ও ঘ) ঠিক করে দেবেন ইসির উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। তাদের নির্ধারিত ক্যাটাগরির পর সংশোধনের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠালে সংশোধনের ধরন অনুযায়ী অনুমোদন দেবে কমিশন। মাঠ অফিস থেকে চৌকশ ও দক্ষ হাতে গোনা কয়েক জন কর্মকর্তাকে নির্বাচন করে এনআইডি উইংয়ে সংযুক্তি নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব কর্মকর্তা মাঠের অফিসের শ্রেণিবিন্যাসের কাজটি করে দিচ্ছেন এবং সে অনুযায়ী মাঠ অফিসে পাঠানো হচ্ছে। তারা (উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) সব তথ্য যাচাই করে সংশোধনের উপযোগী সুপারিশ জানালে কমিশন কার্ডটি মুদ্রণের অনুমোদন দিচ্ছে। এতেই সময়ক্ষেপণ হয় বেশি। ডিজিটাল যুগেও সংশোধনের আবেদন শ্রেণিবিন্যাসের নামে মাসের পর মাস পড়ে থাকে এনআইডি উইংয়ে। সীমিত জনবল দিয়ে কাজ করানোয় ঐ জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের দ্রুত সেবা পাওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।

ইসির সূত্রমতে, সারা দেশে ইসির ৫১৭টি উপজেলা-থানা নির্বাচন অফিস, ৬৪টি জেলা নির্বাচন অফিস, আটটি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস রয়েছে। এনআইডিতে দুই জন পরিচালক, চার জন উপপরিচালক এবং ছয় জন সহকারী পরিচালক দায়িত্ব পালন করছেন। জনবল সীমিত থাকার কারণে সেবা কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রীকরণ করে গেজেট জারি করেছিল ইসি। এনআইডির সেবা বিকেন্দ্রীকরণের নামে নির্বাচন কমিশন যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছিল, তার সুফল সেভাবে মিলছে না। ছবিসহ ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সেবা বিকেন্দ্রীকরণ এক কথায় পুরোপুরিভাবে কার্যকর করেনি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

মাঠ অফিস থেকে ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন কোন শ্রেণির বা ক্যাটাগরিতে (ক, খ, গ ও ঘ) পড়বে, তা নির্ধারণে মাঠ অফিসের কর্মকর্তা এক্তিয়ার আইনে নির্ধারিত আছে। নিজেদের প্রণীত নির্দেশ উপেক্ষা করে মাঠ অফিসের কর্মকর্তাকে এনআইডিতে সংযুক্ত করে তাদের দিয়েই শ্রেণিবিন্যাসের কাজ করানো হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে আইনে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, কাজটি করার জন্য কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমও (সিএমএস) সময়োপযোগী করে তৈরি করা হয়নি। নাম অপরিবর্তিত রেখে শুধু নামের অক্ষরের দু-একটি শব্দ সংশোধনের এক্তিয়ার গেজেট অনুযায়ী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ওপরে অর্পিত। কিন্তু সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ‘ক’ শ্রেণির আবেদন সংশোধনের ক্ষমতা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ করা আছে। পাশাপাশি সংশোধনের আবেদন গ্রহণ, শুনানি ও তদন্তের এক্তিয়ারও এই কর্মকর্তার ওপরে ন্যস্ত আছে। কিন্তু উপজেলা থেকে সরাসরি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের যোগাযোগ হচ্ছে।

ইসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যে আবেদন ঘ ক্যাটাগরির, এটি সংশোধিত হওয়ার জন্য এনআইডির ডিজি বরাবর নথিটি পৌঁছাতে হয়, সেটি যোগাযোগের মাধ্যমে ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে সহজ ক্যাটাগরিতে ফেলা হলে সহজেই এটি সংশোধন হয়ে যাবে। ক্যাটাগরির ফলে ‘গ’ ও ‘ঘ’ ক্যাটাগরির আবেদনগুলো মাসের পর মাস পড়ে থাকলেও ইসি থেকে জবাব পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি কথা হয় ভুক্তভোগী আমজাদ ও মেহেরুন নেছার সঙ্গে। দুই জন গত ২৫ মার্চ আবেদন করলেও এখন অবধি তাদের এনআইডিটি সংশোধন হয়নি। এমনকি টাকা জমা দিয়ে আবেদন করলেও তার কোনো হদিস না পেয়ে গত সপ্তাহে আবার দুজন আবেদন করেছেন।

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.